সুনন্দন বড়ুয়া, প্যারিস থেকে:
তালেবান যোদ্ধাদের দুঃসময়ে নিরাপত্তার ও শান্তির আশ্রয়স্থল হিসাবে বেছে নিতো বৌদ্ধ মঠ পাহাড়ি গুহা গুলাতে যোদ্ধারা আত্নগোপন করে বেড়াতেন। আফগানিস্তান মূলত ইসলাম প্রধান দেশ হলেও, সপ্তম শতাব্দীর আগে বৌদ্ধধর্মের প্রভাব বিস্তার করেছিল। মৌর্য গুপ্ত পাল আমলের নির্মিত এ উপসানালয় আফগানে বুদ্ধ স্থাপনা গুলো এক সময়ে বৌদ্ধ অধ্যুষিত গান্ধা প্রদেশ ভারতের উপমহাদেশে একটি রাজ্যে ছিল। তবে বিশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকেই ধীরে ধীরে সক্রিয় হয় চরমপন্থী ইসলামিক সংগঠন তালেবান।

তালেবানরা যুদ্ধে অর্থের জোগান বজায় রাখতে ঐতিহাসিক বৌদ্ধ মঠ ও স্তূপগুলিতে নিয়মিতই লুঠতরাজ চালাত। মূল্যবান বৌদ্ধমূর্তি এবং বিভিন্ন পুরাতাত্ত্বিক সংগ্রহ চড়া দামে বিক্রি করে দেওয়া হত বৈদেশিক বাজারে। আফগানিস্তানের গৌরবোজ্জ্বল অতীত সাক্ষী যেন উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বামিয়ান প্রদেশে পাথরের পাহাড়ে খোদাই করা বিশ্বে বিরল ১৮০ ফুট উঁচ্চতা অপর টি ১৫০ ফুট উঁচ্চতা বুদ্ধের মূর্তি দুটি দন্ডায়মান ছিল। পরবর্তীতে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতিতে ইসলাম রাজত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় নির্মমভাবেই ভেঙ্গে দেওয়া হয় ২০০১ সালে হামলা চালিয়ে। এটি প্রায় ধ্বংস করে দেয় তালেবান বাহিনী, ধ্বংস করা হয় ১৫০০ বছরের আফগানিস্তানের প্রাচীন ইতিহাস।

ষষ্ঠ শতাব্দীতে বৌদ্ধদের অন্যতম কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয় এই বামিয়ানে কয়েক হাজার বৌদ্ধ ভিক্ষুর বসবাস ছিল তখন এই উপত্যকায়। আফগানিস্তানের এই বৌদ্ধ মন্দিরটিকে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্তিক নিদর্শনের স্বীকৃতি দিয়েছিল ইউনেস্কো। বর্তমানে জাপান সুইজারল্যান্ড বিভিন্ন দেশের উদ্যোগে বুদ্ধ মূর্তি দুটিকে পুনরায় তৈরি ও পুনঃস্থাপন করেছে। তাদের দেশের বর্তমান বৌদ্ধ শূণ্য কিন্তু ইতিহাস রয়ে আছে পাতায় পাতায়, ইসলামের নামে তারা প্রাচীন স্থাপনা ও অন্যান্য ধর্মের অনুসারী উপাসনালয় ধ্বংস করে আজ দুঃসময় পার করতে হয়েছে ২০ টি বছর। আফগানে এখনো শত শত বুদ্ধ স্থাপনা নির্বাচন করেছেন প্রত্নতত্বিক বিভাগ।

এভাবে বুদ্ধ স্থাপনা সমূহকে নষ্ট করতে যতই চেষ্টা করা হোক না কেন, বুদ্ধের পূজার স্থান সমূহকে যতই ভাঙ্গা হোক না কেন, বুদ্ধ ও বৌদ্ধদের প্রতি যতই ঘৃণা হোক না কেন, ২০ বছরের আগেরকার তালেবান বর্তমান চলমান তালেবানের মধ্যে আমরা ব্যাপক পরিবর্তন দেখতে পাবো। মানবতার প্রেম উদয় হবে, অন্যধর্মের প্রতি বিদ্বেষ ভাব ভুলে নতুন শাসনতন্ত্র তৈরি করবে। সর্বক্ষেত্রে সময় সুযোগ ক্ষমতায় অনেক কিছু পরিবর্তন ঘটে, ইতিহাস বয়ে চলে হাজার হাজার বছর ধরে আজও আফগানিস্তানে বহমান বুদ্ধের সেই অহিংসার বাণী যুদ্ধের রণক্ষেত্রে যুদ্ধ দিয়ে উপসম হয় না মৈত্রী ধারা যুদ্ধ উপসম হয়।